সাপ্টিবাড়ী বাজারে একটি ক্রীড়া সংগঠন রয়েছে।
ক্রীড়া (ইংরেজি: Sport) হচ্ছে একটি সংগঠিত, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, বিনোদনধর্মী এবং দক্ষতাসূচক শারীরিক কার্যকলাপ প্রদর্শনের উত্তম ক্ষেত্র। শারীরিক ও মানসিক দৃঢ়তা, কলা-কৌশল এবং সুস্থ ক্রীড়া প্রদর্শন করে একজন বিজয়ী তার অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর নিদর্শন রাখতে পারেন। এটি পরিচালিত হয় একগুচ্ছ নিয়ম-কানুন বা নিজস্ব চিন্তা-চেতনার মাধ্যম। খেলার প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে শারীরিক সক্ষমতা, দক্ষতা ও মর্যাদা যাতে বিজয়ী এবং বিজিত পক্ষ নির্ধারিত হয়। শারীরিক সক্ষমতা হিসেবে মানুষ, প্রাণীসহ বল, যন্ত্র ইত্যাদি সরঞ্জামাদি জড়িত। এছাড়াও মনঃস্তাত্তিক খেলাধূলা হিসেবে কার্ড গেম এবং বোর্ড গেম রয়েছে। এগুলোর কিছু আবার আন্তর্জাতিক অলিম্পিক ক্রীড়া সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত।
শারীরিক ইভেন্টগুলো যেমন গোল করা কিংবা নির্দিষ্ট রেখা অতিক্রম করলে খেলায় ফলাফল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এছাড়াও, ডাইভিং, ফিগার স্কেটিংয়ে খুব ভাল করার দক্ষতা যাচাই ও প্রদর্শন করা অন্যতম বিচার্য বিষয়। ব্যতিক্রম হিসেবে বডি বিল্ডিংয়ের মতো ইভেন্টগুলোয় দক্ষতা প্রদশর্নকে গণ্য করা হয় না।
প্রতিটি খেলার ফলাফলই রেকর্ড হিসেবে রাখা হয় এবং সর্বদাই অধিকাংশ খেলাগুলোতে সর্বোচ্চ পর্যায়কে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার মাধ্যমে খেলাধূলার সংবাদে প্রচার করা হয়। বেশীরভাগ খেলাধূলাই শুধুমাত্র নিছক আনন্দ, মজা অথবা মানুষের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট শারীরিক সক্ষমতার লক্ষ্যে ব্যয়ামের জন্য করা হয়। অধিকন্তু, পেশাদারী খেলাধূলা বিনোদনের অন্যতম মাধ্যমও বটে।
খেলাধূলা চর্চার ফলে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সুন্দর প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলোয়ারসুলভ আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আচরণগুলোর মধ্যে - ব্যক্তিগত আচরণ পরিবর্তনসহ প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, বিচারক(বৃন্দ)কে ধন্যবাদজ্ঞাপন এবং হেরে গেলে বিজয়ীকে অভিনন্দন প্রদান করা অন্যতম।
ক্রীড়া শব্দটি এসেছে প্রাচীন ফরাসী শব্দ ডিস্পোর্টস থেকে যার অর্থ হচ্ছে অবসর। আমেরিকানরা স্পোর্টস শব্দটিকে নিছক বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং ক্রীড়ার একবচন শব্দ হিসেবে স্পোর্টস নামকরণ করেছে। ফার্সি শব্দ হিসেবে ক্রীড়ার ভাবার্থ দাঁড়ায় জয়ী। ক্রীড়াকে চীনা ভাষায় শারীরিক প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক গ্রীক শব্দে দৌঁড়বিদ হিসেবে দাবী করছে।
বিভিন্ন তথ্যসূত্র ঘেটে জানা গেছে, সর্বপ্রথম চীনের নাগরিকেরা খ্রীষ্ট পূর্ব ৪০০০ বছর আগে থেকে খেলাধূলার সাথে জড়িত। জিমন্যাস্টিকস্ প্রাচীন চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হিসেবে স্থান পেয়েছিল। কয়েক হাজার বছর পূর্বে প্রাচীন মিশরের ফারাও সাম্রাজ্যে বেশকিছু খেলা প্রচলিত ছিল। তন্মধ্যে সাঁতার কাটা, মাছ ধরা অন্যতম। এছাড়াও, মিশরীয় খেলাধূলার মধ্যে জ্যাভেলিন বা বর্শা নিক্ষেপ, উচ্চ লম্ফ এবং কুস্তির ব্যাপক প্রচলন ছিল। প্রাচীন ফারসী খেলার মধ্যে ইরানীয় মার্শাল আর্ট হিসেবে জোরখানে যুদ্ধংদেহী মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়। এছাড়াও, প্রাচীন ফারসী খেলা হিসেবে পোলো এবং জস্টিং রয়েছে।[১]
খেলোয়াড়সূলভ মনোভাব হচ্ছে এমন একটি ধারা যা সুস্থ, সুন্দর খেলার অংশবিশেষ। এতে দলীয় সঙ্গীর সাথে সৌজন্যপূর্ণ আচরণ প্রদর্শনসহ প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের নৈতিক আচরণ, স্বাধীনতা এবং জয়ী বা পরাজিত হলেও ব্যক্তি বা দলকে সম্মান দেখানো হয়ে থাকে।
অখেলোয়াড়োচিত আচরণ সুস্থ, সুন্দর খেলাকে কলুষিত করে, খেলার মর্যাদাকে ধুলিস্মাৎ করে। ক্রীড়াবিদ, কোচ, সমর্থক, শুভ্যানুধ্যায়ীরাই মূলতঃ এর সাথে জড়িত। ফলে ব্যক্তি বা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি নষ্টসহ সংক্ষুদ্ধ জনতা সুন্দর সমাজ ও পরিবেশকে ধ্বংস করে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমস্যা তৈরী করে, দেশ ও দশের ভাবমূর্ত্তি ক্ষুণ্ন করে।
এককালে খেলাধূলার মূল উদ্দেশ্যই ছিল মূলতঃ চিত্ত বিনোদন। কিন্তু গণমাধ্যম এবং অবসর সময় কাটানোয় পেশাগত খেলার জুড়ি মেলা ভার। এর ফলে খেলোয়াড়দের মধ্যে অর্থ উপার্জনই মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। পেশাগত খেলায় বিনোদন নয়, বরং আর্থিকভাবে লাভবান এবং নিজ নিজ জনপ্রিয়তাই মূখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে যা প্রাচীন রীতি-নীতি হিসেবে ক্রীড়া চর্চার নির্মল বিনোদনকে নষ্ট করে দিচ্ছে। এছাড়াও, চিত্ত বিনোদনের নতুন মাত্রা হিসেবে পুরুষ এবং মহিলা - উভয় খেলোয়াড়কেই জনপ্রিয় ও শীর্ষস্থানীয় তারকা খ্যাতি এনে দিয়েছে বর্তমানকালের গণমাধ্যম।
ফুটবলই বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। এছাড়াও, হকি, ক্রিকেট, হ্যান্ডবল, ভলিবল, সাঁতার, দৌঁড়, পোলভল্ট, পোলো, রাগবি, টেনিস, টেবিল টেনিস, খোঁ খোঁ, রোয়িং, ব্যাডমিন্টন, কুস্তি, মুষ্টিযুদ্ধ, দাবা, জুডু, ফ্যান্সিং, বাস্কেটবল ইত্যাদি বিভিন্ন দেশের জনপ্রিয় খেলা।
বিজয়ী ও বিজিত নির্ধারণে এক বা একাধিক বিচারক থাকেন। খেলার ধরণ অনুযায়ী রেফারী বা মধ্যস্থতাকারীর নাম নির্ধারিত হয়। যেমনঃ হকি ও ক্রিকেটে আম্পায়ার, ফুটবলে রেফারী, দৌঁড়ে বিচারক ইত্যাদি। তাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত এবং খেলোয়াড়দের অবশ্য পালনীয়।
প্রতিটি ক্রীড়াতেই কিছু লিখিত আকারে রুলস্ বা নিয়ম লিপিবদ্ধ থাকে, যা কোড অব কন্ডাক্ট নামে পরিচিত। নিয়ম বিরুদ্ধ কিছু ঘটলে রেফারী কর্তৃক সতর্কীকরণ চিহ্ন হিসেবে লাল, হলুদ কিংবা সবুজ রংয়ের কার্ড দেখানো হয়। খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে কার্ড প্রদর্শনের উপর নির্ভর করে যে পরবর্তী খেলায় খেলোয়াড়টি অংশ নিতে পারবে কি-না।
দৌঁড়জাতীয় খেলাগুলোতে নির্দিষ্ট একটি স্ট্যাণ্ডে ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অধিকারীর মর্যাদা দিয়ে পদক প্রদান করা হয়। পূর্বে অলিম্পিক খেলায় খেজুর পাতার মুকুট পড়িয়ে মূল্যায়িত করা হতো। দলীয় খেলা হিসেবে ফুটবল, হকি, ক্রিকেটে সোনা, রূপার কাপ বা ট্রফি প্রদান করার পাশাপাশি সেরা খেলোয়াড়ের মর্যাদা হিসেবে নির্দিষ্ট পুরস্কার প্রদান করা হয়। পাশাপাশি চেকের মাধ্যমে অর্থ কিংবা মোটর গাড়ীসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি উপহার হিসেবে দেয়া হয়।
সম্পূর্ণ দেশীয় খেলা হিসেবে কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলার মর্যাদা লাভ করেছে।[২] তবে আইসিসি ট্রফি জয়ের পরবর্তী সময়ে ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশের সমধিক পরিচিত ও ব্যাপকভাবে প্রচলিত খেলারূপে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস